আমরা যারা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমরা রাষ্ট্রের বিপুল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি ¯^ল্প খরচে উচ্চ শিক্ষায় দিক্ষীত হয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার এবং জীবনের বাকী অধ্যায়কে করে তুলছি সুষমামন্ডিত-পুষ্পশোভিত, কিন্তু আমরা কখনো ভাবি না যে-আমাদের মেধার প্রতি রাষ্ট্রের ও জাতির কিছু চাওয়া আছে, আছে কিছু জাতীয় প্রত্যাশা।আমরা রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নিজেদের মেধা শুধু নিজেদের কল্যানে ব্যায় করবো এটা মোটেও কাম্য নয়, বরং আমাদের মেধা দেশ ও জাতির কল্যানে ব্যবহৃত হবে এটাই জাতির চাওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম দেখলাম, শুনলাম, আনন্দ করলাম, স্ফূর্তি করলাম, গৎবাধাঁ কিছু পড়া পড়লাম তারপর একটা ডিগ্রী নিয়ে একটা সুন্দর ক্যারিয়ার নিয়ে অবশিষ্ট জীবনটা পার করে দিলাম, দেশ-জাতিকে কিছুই দিলাম না এর কোন মানে হয় না।
একটা ব্যাপার আমাদের খুব ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার যে, তথ্য সমৃদ্ব হওয়া, ডিগ্রী নেওয়া, ভালো সার্টিফিকেট অর্জন করা আর জ্ঞানী হওয়া এক কথা নয়। শিক্ষা জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নয়, বরং লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার মাধ্যম মাত্র। যার সামনে কোন আদর্শ নাই, মানবতার কল্যানের কোন লক্ষ্য নাই, দেশ-জাতিকে কিছু দেওয়ার প্রেরনা নাই, তার যত ডিগ্রীই থাকুক, যত সার্টিফিকেটই থাকুক, তার শিক্ষা এবং জীবন দুটোই ব্যর্থ।
আমাদের শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্য নিছক ডিগ্রী অর্জেনে সীমাবদ্ব না থেকে আরো বৃহৎ ও মহৎ হতে হবে, জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে দেশ ও জাতির উন্নয়ন, সমৃদ্বি ও প্রগতির প্রচেষ্টা।আমরা আমাদের শিক্ষাজীবনকে নিছক পড়াশোনার গন্ডিতে আটকে না রেখে, দেশপ্রেমে ও মানবতার সেবায় ব্রত হয়ে বৃহৎ গন্ডিতে নিজেদের ছড়িয়ে দিবো।
বলা হয়ে থাকে যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু শিক্ষা তো একটা বস্তু নয় যে এটা দিয়ে জাতির মেরুদন্ডকে সর্বদা সোজা, শক্ত এবং মজবুত রাখা হবে। এই শিক্ষাটা হচ্ছি আমি, আপনি, আমরা-যারা শিক্ষা লাভের প্রয়াস্ ীআমি-আপনি যদি জাতির মেরুদন্ড রূপে না দাঁড়াতে না পারি, দেশ গঠনে অংশ না নেই, দেশের-জাতির কল্যানে ব্রতি না হই তবে কি লাভ এই শিক্ষায়, জাতি আমাদের এতো সুযোগ দিয়ে কি পেলো??
জাতির বিবেক তৈরীর কারখানা হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো,আার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলো জাতির বিবেক।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে তাই চর্চা হওয়ার কথা জ্ঞানের, দেশপ্রেমের, মানবতার আর নৈতিকতার। এখানে তৈরী হওয়ার কথা দক্ষ, দেশপ্রেমিক, আাদর্শবান সু-নাগরিক্। এখানে থাকার কথা শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দের। অথচ আমরা আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখতে পাচ্ছি ডাকাত-সন্ত্রাসের গ্রামরূপে, সেখানে দানবেরা মানুষের সবকিছু লুন্ঠন করে াার খুন করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করে ধর্ষনের সেঞ্চুরি পালন করে, শিক্ষদের বেধড়ক মারধর করতেও তাদের লজ্জা হয় না।বাইরের অঙ্গনে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটিয়ে গোটা জাতির জীবন তারাই অতিষ্ট করে তোলে। আর প্রাশাসনিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে পেলে গডফাদারের ভ’মিকা পালন করে, অথবা জাতির সম্পদ লুন্ঠন করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বা দুর্নীতিতে সারা দুনিয়ার চ্যাম্পিয়ন বানায় ।
জাতির বিবেক যারা তাদের যখন এরুপ দুর্দশা, এরুপ অধঃপতন তখন কী করে এ জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, কী করে এ জাতি অর্জন করবে সমৃদ্বি?? আমরাই যদি না গঁড়ি সুস্থ, সুন্দর সভ্যতা, সংস্কৃতি তবে এ জাতি একদিন বিশ্বের বুকে একটা ব্যাধি রুপে চিহ্নিত হবে। দেশ-জাতির জন্য এ ছাত্র সমাজ যদি কিছু না দিতে পারে তবে এ ছাত্র সমাজের বিদ্যা অর্জন বৃথা।
আপনি যত বিদ্যাই অর্জন করুন না কেন, যদি দেশের প্রতি জাতির প্রতি আপনার দায়বদ্বতার অনুভূতি না থাকে, দেশের জন্য জাতির জন্য নিবেদিত না হউন, তবে ধীক্কার-ঘৃণা আপনার জন্য।
অনেক সময় গড়িঁয়েছে, দুঃখজনক অভিজ্ঞতা এ জাতির দীর্ঘ দিনের। জীবন নদীতে প্রচন্ড ঝড় উঠলে নদীর বিশাল ঢেউয়ের কারনে তলদেশর ময়লা-পঁচা-দুর্গন্ধময় ময়লাগুলো ভেসে উঠার পরও যদি আমরা টের না পাই যে কি পরিমান নোংরা াাবর্জনা নিয়ে নদীটি প্রবাহিত হচ্ছিল, আর আমরা সেই পানি ব্যবহার করে বারবার অসুস্থ হওয়ার পরও সুস্থ হওয়ার আশায় সরল বিশ্বাসে আবারো সেই পানি নিঃসন্দেহে পান করে চলছ্ িএভাবে আর চলতে পারে না। জাতির এই দুর্দিনে জাতির বিবেক ছাত্র-সমাজকে জেগে উঠতে হবে দেশপ্রেমের উদ্দীপনা সহকারে। নিবেদিত হতে হবে প্রতিটি ছাত্র্র-ছাত্রীকে দেশ-জাতি ও মানবতার কল্যানে।জাতির পুনর্গঠন,সমৃদ্বি,উন্নয়ন ও সুস্থ-সুন্দর দেশ গঠনের কাজে আমাদেরকে এখনি অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে।শুধু বিদ্যা লাভ আর ক্যাম্পাস জীবন উপভোগের গন্ডিতে নিজেদের আটকে রাখলে হবে না, নিজেদেরকে ছড়িতে দিতে হবে দেশ-জাতির কল্যানে বৃহত্তর গন্ডিতে।এ ব্যাপারে অবহেলা করলে একদিন এ জাতি নিজের অজান্তেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে।
এতক্ষন যে বিষয়ে লিখলাম , কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একটি বিপ্লবী সিদ্বান্ত নিতে হবে।আমরা ছাত্রসমাজ রাজিৈতক ক্ষমতা ভোগের জন্য ব্যাবহৃত না হয়ে জাতি গঠনের জন্য দেশের প্রতি দায়বদ্বতা ও দেশপ্রেম থেকে ব্যাবহৃত হবো-এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ব হয়ে সামনের পত চলবো।
দেশের প্রতি দায়বদ্বতা থেকে গড়ে উঠুক সুখী,সুন্দর,সমৃদ্ব জাতি।দেশপ্রেমে সবাই উদ্বুদ্ব হয়ে গড়ে তুলি আগামীর বাংলাদেশ।
-মুনতাসির